Header Ads

ad728
  • Breaking News

    ‘ওলিআল্লাহ্’ ও ‘হিন্দু’

    ‘ওলিআল্লাহ্’ ও ‘হিন্দু’
    -----
    এই পনের বিশ মিনিট আগে। ছেলেকে স্কুল থেকে আনার সময় একটা মাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ছেলে বলল, আব্বু, আমি দেখেছি কী জান? একটা হিন্দু লোক এই মাজারের দেয়াল ধরে সালাম করে গেছে।

    -এইটাই স্বাভাবিক, বাবা। আশেপাশের এলাকার অনেক অনেক হিন্দু ধর্মের মানুষ যেতে নিলেই সালাম করে।
    -কেন?
    -কারণ, তাঁরা মনে করেন, যিঁনি ঈশ্বর তিনিই আল্লাহ্। তাঁরা মনে করেন, এই মাজারে যে আল্লাহ্’র ওয়ালি শুয়ে আছেন, তিঁনি ঈশ্বরের একজন প্রিয়জন। এইজন্য সালাম করে। তারা জানে, তিনি মুসলমান। তারা জানে, তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন, কিন্তু তবু তাঁকে তারা সত্য জানে।
     
    ছেলে যদি আরো প্রশ্ন করতো, তবে আলাপটা এদিকে যেতো-

    -তাহলে তারা মুসলমান হয়নি কেন?
    -বাবা, তারা কেউ মুসলমান হয়নি এমনতো না। আমরা কারা? আমরা তো এই ওলিউল্লাহ্’র যুগের যে হিন্দুরা ছিলেন, তাদেরই বংশধর। এই ওলিউল্লাহ্’র যুগে অনেক অনেক মানুষ মুসলমান হয়ে গিয়েছিল বলেই তো আমরা আজকে মুসলমান। কেউ কেউ হয়নি। যারা হয়নি তাদের মধ্যে খুব কম মানুষ এই সূফি সাহেবকে ঘৃণা করেছে। কিন্তু বেশিরভাগই শ্রদ্ধা করেছে। ভাল বেসেছে। তবু অনেকে হয়নি আরকী। মানুষের পক্ষে কি সব ভাল কাজ করা হয়ে যায়, বল? সব মানুষ কি সাহস করে উঠতে পারে? আর সূফিরা অন্যরকম। তারা তো হিন্দু মুসলমান দেখে ভালবাসা দেননি। তারা তো হিন্দু মুসলমান দেখে মায়া করেননি। তারা মানুষ দেখেছেন আর মায়া করেছেন। আহা, মানুষ, কত্ত দামি! কত্ত দামি! অন্তর থেকে এমনভাবে মায়া করেছেন, যে, সেই মায়া মানুষ ১০০ বছর পরও ভুলতে পারে না, ৫০০ বছর পরও ভুলতে পারে না, ১ হাজার বছর পরও ভুলতে পারে না।

    আর এরা তো দেখেছে, এই সূফি সাহেবের দেয়াল ধরে কিছু চাইলে তাদের ‘ঈশ্বর’ সেটা ঠিকই কবুল করেন। বারবার দেখেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেখেছে।

    তুমি আমার ছেলে, তোমাকে যদি কেউ মায়া করে যত্ন করে, আমি কি তার ভাল চাইব না? আমি কি তার ভাল করব না? আল্লাহ্ তো সারা পৃথিবীর মানুষকে এম্নিতেও শিফা দেন। আল্লাহ্ তো সারা পৃথিবীর মানুষকে এম্নিতেও ধন সম্পদ সুখ শান্তি দেন। এম্নিতেই যা দেন, তার প্রিয়জনের প্রতি যদি কেউ মায়া রাখে, তিনি কি বেশি দিতে পারেন না?

    এগুলো খুব সহজ কথা বাবা। আর তারা তো শুধু মায়াই দিয়ে গেছেন। শুধু আদরই করে গেছেন। তাদের দেখলে রোগ ভাল হয়ে যেত হিন্দু মুসলিমের। তাদের কাছে দুটা কথা শুনলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেত। তাদের কাছে এসে কাঁদলে সব দু:খ চলে যেতো।

    মানুষকে তুমি ঘৃণা দাও, ১ হাজার বছর পরও মানুষ সেটা মনে রাখবে।মানুষকে ভালবাসা দাও, ১ হাজার বছর পরও সেটা মানুষ মনে রাখবে।

    এইটাই সিস্টেম বাবা, এইটাই সিস্টেম। মনে মতলব রেখে ভালবাসা দিলে হবে না। বে-মতলব ভালবাসা দিতে হবে। আনকন্ডিশনাল লাভ। আনকন্ডিশনাল সারভিস।

    এটা সূফিরা কেন দেয়, সূফিরা জানে। কিন্তু সবাইকে বলে বুঝিয়ে শেষ করতে পারে না। বলে বোঝানোর বিষয় এটা না। মুখের শব্দ দিয়ে সব যদি প্রকাশ করাই যেত, অন্তরের অনুভূতি আর মনের ভাবনা বলে কিছু থাকতো না। শুধু মুখের শব্দই থাকতো।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728