সহিহ হাদিসের তাসাউফ
সহিহ হাদিসের তাসাউফ শুনলে সহ্য করতে পারবেন তো?
তৃষ্ণার্ত! পান করুন এবং নিবারণ করুন ভেতরের আগুন।
সূফিত্ব প্রকাশিত, নিয়ে তাঁর হয়ে যান।
-----
০.
আল্লাহ্’র ইবাদত কর এমনভাবে যেন তুমি তাকে দেখছ।
নিজের নাফসকে মৃত জানো।
মাযলুমের দোয়াকে ভয় কর! (তাবরানি, সহিহ)
সূফিরা আগেই মরা। মরার আগে মেরে ফেলুন নিজের ভেতরের পশুত্বকে, আল্লাহ্ কে অনুভব করুন এবং কারো উপর বিন্দুমাত্র যুলম করা থেকে নিজেকে বাঁচান। সব পেয়ে গেছেন।
১.
যে-ই তার কোন ভাইয়ের সাথে লড়ে, মুখে আঘাত করবে না! কারণ নিশ্চই আল্লাহ্ আ’দমকে আপন সুরাতে সৃষ্টি করেছেন।
(ইযা ক্বাতালা আহাদুকুম আখাহু,ফাল ইয়াযতানিবিল ওয়াজহা, ফাইন্নাল্লাহ খালাকা আ’দামা আলা সুরাতিহি। আন আবি হুরাইরাতা, রাওয়াহুল মুসলিম, হাদিসুন সহিহুন)
কত্তবড় কলিজা!
বনি আ’দমের মাথা কেটে নেয়। ইবনু মুহাম্মাদ দ.’র মাথা বর্ষায় বিঁধায়। বারবার, বারবার। বনি আদমের মাথা থালায় সাজিয়ে নিয়ে আসে। যুগে যুগে, বারবার। ইয়া আল্লাহ্, ইবনু মুহাম্মাদ দ.’র কাটা মাথায়-ঠোঁটে বেত দিয়ে বাড়ি মারে!
ভাল কথা, আল্লাহ্’র সুরাত এত সহজে বুঝে যাবার চেষ্টা করব না,
করলে ধরা খাবো। এই হাদিসের কোন অর্থ হয় না। এই হাদিসকে শুধু অনুভব করতে হয়। আমাদের ইমাম আল গাজালি বলেছেন, ভেতরের সম্পর্ক বাইরের রূপের সম্পর্ক ছাড়া তো প্রকাশ পায় না। বিষয় এটুকুই।
তাই আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, ‘তাই তাকে (আদমকে) যখন সৃষ্টি করলাম, আমার থেকে ফুঁকে দিলাম তাকে’
তাই আল্লাহ্ বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, কই, তুমি তো আমাকে দেখতে যাওনি!’
তাইতো আল্লাহ্ বলেন, ‘আমার বান্দা বাড়তি বন্দেগি করা বন্ধ করে না যে পর্যন্ত না আমি তাকে ভালবাসি। আর একবার আমি তাকে ভালবেসে ফেললে আমিই তার শ্রবণশক্তি যা দিয়ে সে শোনে। তার দৃষ্টিশক্তি যা দিয়ে সে দেখে। তার শব্দশক্তি যা দিয়ে সে বলে।’
বান্দা! বান্দাহে! তুমি কবে আল্লাহ্ কে চিনবে? কবে আল্লাহ্’র ভালবাসা জয় করবে? কবে তুমি যা শুনবে আল্লাহ্’র দ্বারা ফিল্টার করেই শুনবে? কবে যা দেখবে আল্লাহ্ দেখাবেন বলেই দেখবে যা অন্যে দেখেও না? কবে যা বলবে, তা আল্লাহ্ বলাবেন বলেই বলবে?
বান্দা! আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসার জন্য ব্যকুল। তুমি তোমার বন্দেগির হক আদায় করো!
আল গাজালি বলেন, ভেতরের সম্পর্ক কিছু ভাষায় প্রকাশ করা যায়, কিছু যায় না।
২.
নিশ্চই আল্লাহ্ মায়াময় আর তিনি মায়াময়তাকে ভালবাসেন।
(ইন্নাল্লাহুল কারিম, ইউহিব্বুল কারামা। আন সাহল বিন সা’দ, রাওয়াহু আত্-ত্বাবরানি, হাদিসুন সহিহ)
তাইতো তিনি দ. বলেন,
যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহ্’র প্রতি কৃতজ্ঞ নয়।
(আবু সাঈদ, আহমাদ ইবনু হাম্বল, সহিহ)
কী বলব দাসেরও কথা,
তুমি যেথা আমি হেথা-
হৃদ দিয়েছি, আর যদি চাও-
ছিন্ন করেই দেবো মাথা।
০.
আখিরাতওয়ালার জন্য দুনিয়া হারাম। দুনিয়াওয়ালার জন্য আখিরাত হারাম। আল্লাহ্ওয়ালার জন্য দুনিয়া-আখিরাত দুটাই হারাম।
(মুফাসসিরদের প্রধান ইবন আব্বাস বর্ণিত, দায়লামি, সহিহ)
বুঝলাম প্রথম দুটা। তিন নাম্বারটা তো বুঝলাম না। আখেরাত আমার জন্য হারাম হবে কেন? এতদিন তো জেনে এসেছি রাবেয়া বসরি খুবই বেহুঁশ, জান্নাত জ্বালিয়ে দিতে আর জাহান্নাম নিভিয়ে দিতে চেয়েছেন। এখন দেখি কথা সত্য। :)
সূফিরা বলেন,
অতি সাধারণরা অন্তরের চূড়ান্ত বাসনা হিসাবে দুনিয়া চেয়ে বসে।
সাধারণরা দুনিয়া ও আখিরাত চায়।
অসাধারণরা আখিরাত চায়।
অনন্যসাধারণরা (খাসসাতুল খাসসা) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ. কে চায়।
সবকিছুকে কাঁচকলা দেখিয়েই চায়। আহলুল্লাহ্ হলেন খাসসাতুন খাসসা। তাঁরা আরিফবিল্লাহ্।
ইবনুল আরাবি বলেন,
এইযে খাসসাতুন খাসসা, এদেরকে আকিদা-টাকিদা নিয়ে খুঁচিও না।
মাওয়াকিফ গ্রন্থে আমির আবদ আল ক্বাদির বলেন,
মুআরিফ হলেন সেই ব্যক্তি যার উপর থেকে আল্লাহ্ প্রকৃতসত্যের পর্দাগুলোকে সরিয়ে নিয়েছেন... আরিফ তার ভাল কাজে তুষ্ট নয় এবং তার পাপে চিন্তিত নয়... কোনকিছুই তাকে সন্তুষ্ট এবং অসন্তুষ্ট করে না... বিধিশাস্ত্রে ঝিনুকের খোলস আর শাঁস দুটাই আছে। হাকিকাহ্ তে আছে কেবল শাঁস।
বাংলার মরমিরা বলেন,
ঝিনুকে মুক্তো হলে সেই ঝিনুক আর মুখ খোলে না।
৩.
যারা রহিম তাদের উপর রহম করেন আর-রহমান (আল্লাহ্)। দুনিয়ায় যা আছে সবকিছুর উপর দয়া করো, আসমানে যিঁনি/যা আছেন, তিঁনি/তারা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।
(আর রাহিমুনা ইয়ারহামুহুমুর রাহমান তাবারাকা ওয়াতাআলা। ইরহামু মা ফিল আরদ্বি, ইয়ারহামুকুম মা ফিস্ সামা-ই। আন ইবনুল উমার, রাওয়াহুল হাকিম, হাদিস সহিহ)
কবে শুরু করছেন দুনিয়ায় যা আছে তার সবকিছুর প্রতি স-মমতা নি:স্বার্থ দয়া করা?
৪.
আল্লাহ্’র উপর ঈমান আনার পর সবচে বড় আ’মল হল মানুষকে কল্যাণকরভাবে ভালবাসা।
(আফদ্বালুল আ’মালি বা’দা ঈমানি বিল্লাহ্ আত্তাওয়াদ্দুদু ইলান্ না-স। আন আবি হুরাইরাতা। রাওয়াহুত্ ত্বাবরানি। হাদিসুন হাসান।)
আল্লাহ্’র উপর ঈমান তো এনেই ফেলেছেন। মানুষের সেবা করতে করতে ভালবাসাটা কখন শুরু হবে? এরচে বড় আমল তো নাই।
৫.
তোমাকে অবশ্যই বন্ধুত্বময় কল্যাণ করতে হবে (রফিকগিরি) এবং উগ্র ও অভদ্র হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
(বুখারি, সহিহ)
৬.
তোমাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠ বিষয়টাই হল এটার সহজ-সরলতা।
(তাবরানি, সহিহ)
কেন সূফিরা সহজ সরল? টানে না, হ্যাচড়ায় না, বর্শাবিদ্ধ করে না, মাথা কেটে থালায় সাজিয়ে নেয় না? কী জানি, কেন তারা এসব করে না!
তবে আমাদের ইমাম ইবনুল আরাবির কাছে শুনি আমাদের ইমাম আবদুল ক্বাদির আল জিলানির ছাত্র আবু সুউদ ইবন আশ শিবল বলেছেন,
তাসাউউফ হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা।
এইজন্যই তো রাসূল দ. বলেছেন,
৭.
ধর্মে মুখলিস হও (শুদ্ধ আন্তরিক নিবেদিত হও), সামান্য আ’মাল (ভাল কাজ, ইবাদাত) ই তোমার জন্য যথেষ্ট।
(আল হাকিম, সহিহ)
৮-৯.
বস্তুর ভালবাসা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে দেয়। (আবু দাঊদ, হাসান)
বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে দেয়। (সুয়ূতি, সহিহ)
এইটাই বস্তুবাদ। এইটাই নাফসানিয়াত। সিম্পল।
১০.
ও আবু উমামা! এমনও মু’মিনরা আছে যাদের হৃদয় আমার জন্য নরম হয়ে গলে গলে যায়।
(আহমাদ ইবনু হাম্বল, সহিহ)
ইয়া রাসূলআল্লাহ্! ইয়া রাসূলআল্লাহ্! ইয়া রাসূলআল্লাহ্! সালাওয়াতুল্লাহি ওয়া সালামুহু আলাইক!
ঈসা নূর-আদ-দিন বলেন,
ইসলামে আধ্যাত্মিকতার মূল উপাদানে রাসূল দ.’র ভালবাসা।
এজন্যই বোখারিতে আনাস ইবনু মালিক রা.’র বর্ণনায় সহিহ সূত্রে এসেছে, দেহে একটা মাংসপিন্ড আছে, যেটা শুদ্ধ থাকলে সারা দেহ শুদ্ধ আর যেটা অশুদ্ধ থাকলে সারা দেহ অশুদ্ধ। সেটা হৃদয় (ক্বালব) ছাড়া কিছুই নয়।
এজন্যই বোখারিতে এসেছে, আমার জুতা দেখাও আর বল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ তে বিশ্বাস করে কিনা। যদি করে, তবে তাকে বলে দাও সে নিশ্চিন্তে জান্নাতি।
এজন্যই বোখারি বা মুসলিমে এসেছে, কেউ মু’মিন হতেই পারবে না, যদি আমাকে নিজের প্রাণ ও পরিবার ও সবকিছুর চেয়ে বেশি ভাল না বাসে।
এজন্যই বারবার এসেছে অসংখ্য সহিহ হাদিসে, যে যাকে বাসে ভাল সে তার সাথেই থাকবে অনন্তকাল।
এজন্যই রাসূল দ. বলেছেন, তোমরা সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার আগে আমার ভালবাসা ও আমার পরিবারের ভালবাসা শিক্ষা দাও।
রাসূলে নোমা বলেন,
ধর্ম আমার ইশকে মুহাম্মাদ দ., তার হুব্বই ঈমান আমার।
১১.
মহান উমার ইবনুল খাত্তাব রা. বললেন, একদিন মসজিদে নববিতে ঢুকছিলাম, তখন মুআজ ইবন জাবাল রা. রাসূল দ.’র আলোকিত কবর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরুচ্ছিলেন,
মুআজ বললেন, রাসূল দ. তো বলেছেন,
* ছোট একটা লোক দেখানো ইবাদাতও শিরক।
* আল্লাহ্’র কোনও বন্ধুর প্রতি শত্রুতা রাখা আল্লাহ্’র সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সমান।
* আল্লাহ্ ভালবাসেন সাহসিদের,
* ভালবাসেন ধার্মিকদের আর-
* ভালবাসেন তাদের, যারা সব সময়ে আড়ালে থাকে: যারা থাকতেও কেউ চোখ ফিরিয়ে দেখে না আর চলে গেলেও কেউ তাদের কথা ভাবেও না। তাদের ক্বলবগুলো পথ-দেখানো মশাল। তারা গরিব জায়গায় নিজেদের লুকিয়ে রাখে। (আল হাকিম, সহিহ)
কী বলব দাসেরও কথা-
তুমি যেথা, আমি হেথা,
তোমা বিনে যত্ত কথা-
সবই বৃথা, সবই বৃথা।
তৃষ্ণার্ত! পান করুন এবং নিবারণ করুন ভেতরের আগুন।
সূফিত্ব প্রকাশিত, নিয়ে তাঁর হয়ে যান।
-----
০.
আল্লাহ্’র ইবাদত কর এমনভাবে যেন তুমি তাকে দেখছ।
নিজের নাফসকে মৃত জানো।
মাযলুমের দোয়াকে ভয় কর! (তাবরানি, সহিহ)
সূফিরা আগেই মরা। মরার আগে মেরে ফেলুন নিজের ভেতরের পশুত্বকে, আল্লাহ্ কে অনুভব করুন এবং কারো উপর বিন্দুমাত্র যুলম করা থেকে নিজেকে বাঁচান। সব পেয়ে গেছেন।
১.
যে-ই তার কোন ভাইয়ের সাথে লড়ে, মুখে আঘাত করবে না! কারণ নিশ্চই আল্লাহ্ আ’দমকে আপন সুরাতে সৃষ্টি করেছেন।
(ইযা ক্বাতালা আহাদুকুম আখাহু,ফাল ইয়াযতানিবিল ওয়াজহা, ফাইন্নাল্লাহ খালাকা আ’দামা আলা সুরাতিহি। আন আবি হুরাইরাতা, রাওয়াহুল মুসলিম, হাদিসুন সহিহুন)
কত্তবড় কলিজা!
বনি আ’দমের মাথা কেটে নেয়। ইবনু মুহাম্মাদ দ.’র মাথা বর্ষায় বিঁধায়। বারবার, বারবার। বনি আদমের মাথা থালায় সাজিয়ে নিয়ে আসে। যুগে যুগে, বারবার। ইয়া আল্লাহ্, ইবনু মুহাম্মাদ দ.’র কাটা মাথায়-ঠোঁটে বেত দিয়ে বাড়ি মারে!
ভাল কথা, আল্লাহ্’র সুরাত এত সহজে বুঝে যাবার চেষ্টা করব না,
করলে ধরা খাবো। এই হাদিসের কোন অর্থ হয় না। এই হাদিসকে শুধু অনুভব করতে হয়। আমাদের ইমাম আল গাজালি বলেছেন, ভেতরের সম্পর্ক বাইরের রূপের সম্পর্ক ছাড়া তো প্রকাশ পায় না। বিষয় এটুকুই।
তাই আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, ‘তাই তাকে (আদমকে) যখন সৃষ্টি করলাম, আমার থেকে ফুঁকে দিলাম তাকে’
তাই আল্লাহ্ বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, কই, তুমি তো আমাকে দেখতে যাওনি!’
তাইতো আল্লাহ্ বলেন, ‘আমার বান্দা বাড়তি বন্দেগি করা বন্ধ করে না যে পর্যন্ত না আমি তাকে ভালবাসি। আর একবার আমি তাকে ভালবেসে ফেললে আমিই তার শ্রবণশক্তি যা দিয়ে সে শোনে। তার দৃষ্টিশক্তি যা দিয়ে সে দেখে। তার শব্দশক্তি যা দিয়ে সে বলে।’
বান্দা! বান্দাহে! তুমি কবে আল্লাহ্ কে চিনবে? কবে আল্লাহ্’র ভালবাসা জয় করবে? কবে তুমি যা শুনবে আল্লাহ্’র দ্বারা ফিল্টার করেই শুনবে? কবে যা দেখবে আল্লাহ্ দেখাবেন বলেই দেখবে যা অন্যে দেখেও না? কবে যা বলবে, তা আল্লাহ্ বলাবেন বলেই বলবে?
বান্দা! আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসার জন্য ব্যকুল। তুমি তোমার বন্দেগির হক আদায় করো!
আল গাজালি বলেন, ভেতরের সম্পর্ক কিছু ভাষায় প্রকাশ করা যায়, কিছু যায় না।
২.
নিশ্চই আল্লাহ্ মায়াময় আর তিনি মায়াময়তাকে ভালবাসেন।
(ইন্নাল্লাহুল কারিম, ইউহিব্বুল কারামা। আন সাহল বিন সা’দ, রাওয়াহু আত্-ত্বাবরানি, হাদিসুন সহিহ)
তাইতো তিনি দ. বলেন,
যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহ্’র প্রতি কৃতজ্ঞ নয়।
(আবু সাঈদ, আহমাদ ইবনু হাম্বল, সহিহ)
কী বলব দাসেরও কথা,
তুমি যেথা আমি হেথা-
হৃদ দিয়েছি, আর যদি চাও-
ছিন্ন করেই দেবো মাথা।
০.
আখিরাতওয়ালার জন্য দুনিয়া হারাম। দুনিয়াওয়ালার জন্য আখিরাত হারাম। আল্লাহ্ওয়ালার জন্য দুনিয়া-আখিরাত দুটাই হারাম।
(মুফাসসিরদের প্রধান ইবন আব্বাস বর্ণিত, দায়লামি, সহিহ)
বুঝলাম প্রথম দুটা। তিন নাম্বারটা তো বুঝলাম না। আখেরাত আমার জন্য হারাম হবে কেন? এতদিন তো জেনে এসেছি রাবেয়া বসরি খুবই বেহুঁশ, জান্নাত জ্বালিয়ে দিতে আর জাহান্নাম নিভিয়ে দিতে চেয়েছেন। এখন দেখি কথা সত্য। :)
সূফিরা বলেন,
অতি সাধারণরা অন্তরের চূড়ান্ত বাসনা হিসাবে দুনিয়া চেয়ে বসে।
সাধারণরা দুনিয়া ও আখিরাত চায়।
অসাধারণরা আখিরাত চায়।
অনন্যসাধারণরা (খাসসাতুল খাসসা) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ. কে চায়।
সবকিছুকে কাঁচকলা দেখিয়েই চায়। আহলুল্লাহ্ হলেন খাসসাতুন খাসসা। তাঁরা আরিফবিল্লাহ্।
ইবনুল আরাবি বলেন,
এইযে খাসসাতুন খাসসা, এদেরকে আকিদা-টাকিদা নিয়ে খুঁচিও না।
মাওয়াকিফ গ্রন্থে আমির আবদ আল ক্বাদির বলেন,
মুআরিফ হলেন সেই ব্যক্তি যার উপর থেকে আল্লাহ্ প্রকৃতসত্যের পর্দাগুলোকে সরিয়ে নিয়েছেন... আরিফ তার ভাল কাজে তুষ্ট নয় এবং তার পাপে চিন্তিত নয়... কোনকিছুই তাকে সন্তুষ্ট এবং অসন্তুষ্ট করে না... বিধিশাস্ত্রে ঝিনুকের খোলস আর শাঁস দুটাই আছে। হাকিকাহ্ তে আছে কেবল শাঁস।
বাংলার মরমিরা বলেন,
ঝিনুকে মুক্তো হলে সেই ঝিনুক আর মুখ খোলে না।
৩.
যারা রহিম তাদের উপর রহম করেন আর-রহমান (আল্লাহ্)। দুনিয়ায় যা আছে সবকিছুর উপর দয়া করো, আসমানে যিঁনি/যা আছেন, তিঁনি/তারা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।
(আর রাহিমুনা ইয়ারহামুহুমুর রাহমান তাবারাকা ওয়াতাআলা। ইরহামু মা ফিল আরদ্বি, ইয়ারহামুকুম মা ফিস্ সামা-ই। আন ইবনুল উমার, রাওয়াহুল হাকিম, হাদিস সহিহ)
কবে শুরু করছেন দুনিয়ায় যা আছে তার সবকিছুর প্রতি স-মমতা নি:স্বার্থ দয়া করা?
৪.
আল্লাহ্’র উপর ঈমান আনার পর সবচে বড় আ’মল হল মানুষকে কল্যাণকরভাবে ভালবাসা।
(আফদ্বালুল আ’মালি বা’দা ঈমানি বিল্লাহ্ আত্তাওয়াদ্দুদু ইলান্ না-স। আন আবি হুরাইরাতা। রাওয়াহুত্ ত্বাবরানি। হাদিসুন হাসান।)
আল্লাহ্’র উপর ঈমান তো এনেই ফেলেছেন। মানুষের সেবা করতে করতে ভালবাসাটা কখন শুরু হবে? এরচে বড় আমল তো নাই।
৫.
তোমাকে অবশ্যই বন্ধুত্বময় কল্যাণ করতে হবে (রফিকগিরি) এবং উগ্র ও অভদ্র হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
(বুখারি, সহিহ)
৬.
তোমাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠ বিষয়টাই হল এটার সহজ-সরলতা।
(তাবরানি, সহিহ)
কেন সূফিরা সহজ সরল? টানে না, হ্যাচড়ায় না, বর্শাবিদ্ধ করে না, মাথা কেটে থালায় সাজিয়ে নেয় না? কী জানি, কেন তারা এসব করে না!
তবে আমাদের ইমাম ইবনুল আরাবির কাছে শুনি আমাদের ইমাম আবদুল ক্বাদির আল জিলানির ছাত্র আবু সুউদ ইবন আশ শিবল বলেছেন,
তাসাউউফ হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা।
এইজন্যই তো রাসূল দ. বলেছেন,
৭.
ধর্মে মুখলিস হও (শুদ্ধ আন্তরিক নিবেদিত হও), সামান্য আ’মাল (ভাল কাজ, ইবাদাত) ই তোমার জন্য যথেষ্ট।
(আল হাকিম, সহিহ)
৮-৯.
বস্তুর ভালবাসা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে দেয়। (আবু দাঊদ, হাসান)
বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে দেয়। (সুয়ূতি, সহিহ)
এইটাই বস্তুবাদ। এইটাই নাফসানিয়াত। সিম্পল।
১০.
ও আবু উমামা! এমনও মু’মিনরা আছে যাদের হৃদয় আমার জন্য নরম হয়ে গলে গলে যায়।
(আহমাদ ইবনু হাম্বল, সহিহ)
ইয়া রাসূলআল্লাহ্! ইয়া রাসূলআল্লাহ্! ইয়া রাসূলআল্লাহ্! সালাওয়াতুল্লাহি ওয়া সালামুহু আলাইক!
ঈসা নূর-আদ-দিন বলেন,
ইসলামে আধ্যাত্মিকতার মূল উপাদানে রাসূল দ.’র ভালবাসা।
এজন্যই বোখারিতে আনাস ইবনু মালিক রা.’র বর্ণনায় সহিহ সূত্রে এসেছে, দেহে একটা মাংসপিন্ড আছে, যেটা শুদ্ধ থাকলে সারা দেহ শুদ্ধ আর যেটা অশুদ্ধ থাকলে সারা দেহ অশুদ্ধ। সেটা হৃদয় (ক্বালব) ছাড়া কিছুই নয়।
এজন্যই বোখারিতে এসেছে, আমার জুতা দেখাও আর বল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ তে বিশ্বাস করে কিনা। যদি করে, তবে তাকে বলে দাও সে নিশ্চিন্তে জান্নাতি।
এজন্যই বোখারি বা মুসলিমে এসেছে, কেউ মু’মিন হতেই পারবে না, যদি আমাকে নিজের প্রাণ ও পরিবার ও সবকিছুর চেয়ে বেশি ভাল না বাসে।
এজন্যই বারবার এসেছে অসংখ্য সহিহ হাদিসে, যে যাকে বাসে ভাল সে তার সাথেই থাকবে অনন্তকাল।
এজন্যই রাসূল দ. বলেছেন, তোমরা সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার আগে আমার ভালবাসা ও আমার পরিবারের ভালবাসা শিক্ষা দাও।
রাসূলে নোমা বলেন,
ধর্ম আমার ইশকে মুহাম্মাদ দ., তার হুব্বই ঈমান আমার।
১১.
মহান উমার ইবনুল খাত্তাব রা. বললেন, একদিন মসজিদে নববিতে ঢুকছিলাম, তখন মুআজ ইবন জাবাল রা. রাসূল দ.’র আলোকিত কবর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরুচ্ছিলেন,
মুআজ বললেন, রাসূল দ. তো বলেছেন,
* ছোট একটা লোক দেখানো ইবাদাতও শিরক।
* আল্লাহ্’র কোনও বন্ধুর প্রতি শত্রুতা রাখা আল্লাহ্’র সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সমান।
* আল্লাহ্ ভালবাসেন সাহসিদের,
* ভালবাসেন ধার্মিকদের আর-
* ভালবাসেন তাদের, যারা সব সময়ে আড়ালে থাকে: যারা থাকতেও কেউ চোখ ফিরিয়ে দেখে না আর চলে গেলেও কেউ তাদের কথা ভাবেও না। তাদের ক্বলবগুলো পথ-দেখানো মশাল। তারা গরিব জায়গায় নিজেদের লুকিয়ে রাখে। (আল হাকিম, সহিহ)
কী বলব দাসেরও কথা-
তুমি যেথা, আমি হেথা,
তোমা বিনে যত্ত কথা-
সবই বৃথা, সবই বৃথা।
No comments